বাজারের পশ্চিম দিকে বয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ। নদটি খনন করে মাটি রাখা হয়েছে পাড়ে। এর ফলে বাজার থেকে বৃষ্টির পানি বের হতে পারছে না
কাদাপানিতে একাকার, বেচাকেনায় মন্দা
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি বাজারের পাশে নদী খনন হচ্ছে। এতে বাজারের পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। আবার বাজারের ভেতর অলিগলিতে নতুন মাটি ফেলা হলেও পাকা করা হয়নি। ফলে চলাচলের পথ কাদাপানিতে একাকার। ভোগান্তি বাড়ায় বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই এ বাজারে জনসমাগম কমেছে, বেচাকেনাও কমতির দিকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৩২ সালের দিকে কপিলমুনি বাজার গড়ে ওঠে। এর আরেক নাম বিনোদগঞ্জ। খুলনা-পাইকগাছা সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। বাজারের পশ্চিম দিকে বয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ। নদটি খনন করে মাটি রাখা হয়েছে পাড়ে। এর ফলে বাজার থেকে বৃষ্টির পানি বের হতে পারছে না। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমের শুরুতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে বাজারের ভেতরের রাস্তায় মাটি ফেলা হয়। কিন্তু তা পাকা না করায় এখন পানি জমে কাদা হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ী, দোকানি ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আনারুল ইসলাম জানান, এই বাজারে দেড় হাজারের বেশি ছোট-বড় দোকান আছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ কোটি টাকার কেনাবেচা হয়। সপ্তাহে দুদিন রবি ও বৃহস্পতিবার হাট বসে। প্রতি হাটে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। তবে বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে বাজারের অলিগলি কাদায় ভরে গেছে। দোকানে মালপত্র নেওয়া যাচ্ছে না। লোকজনও আসছে কম। এর ফলে বেচাকেনাও কমে যাচ্ছে।
গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারের সব অলিগলি কাদায় ভরা। কাদার মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্বে একটি করে ইট দিয়ে পায়ে চলাচলের অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ইটের ওপর দিয়ে একজনের বেশি যাতায়াত করতে পারছেন না। ইটগুলোও ডুবে গেছে কাদার মধ্যে। বাজারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনকে চলাচল করতে দেখা যায়। দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি কম। এ বাজারের সামি বস্ত্রবিতানের মালিক শেখ সাহানুজ্জামান বলেন, ‘আশপাশের অনেক উপজেলা থেকে মানুষ এখানে কেনাকাটা করতে আসতেন। ঈদ বা যেকোনো উৎসবে এ বাজারে কেনাকাটা জমে উঠত। তবে কাদাপানির কারণে গত রোজার ঈদে ক্রেতা ছিল, বিক্রিও তেমন হয়নি। এ রকম চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’
পার্শ্ববর্তী হরিদাসকাটী গ্রামের বাসিন্দা তপন কুমার কর এখানে নিয়মিত বাজারসদাই করেন। তিনি বলেন, ‘কাদাপানিতে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে বাজারের মধ্যে ঢোকা দায়। প্রধান সড়কের পাশের দোকান থেকেই কেনাকাটা করি। খুব বেশি প্রয়োজন হলে জুতা খুলে প্যান্ট গুটিয়ে বাজারের মধ্যে যাই।’
কপিলমুনি ইউপির চেয়ারম্যান মো. কাওছার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদী খনন করার ফলে বাজারের পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই বাজারে পানি জমত। এ কারণে মাটি দিয়ে বাজার উঁচু করার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় মাটি ফেলেই কাজ শেষ করতে হয়েছে। মসজিদ সড়কটি কিছুটা চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ থেকে বাজারটি সংস্কারের জন্য আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই রাস্তা, ড্রেনসহ বাজার উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।’
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস